Header Ads

ফিরে এসো 🤲🤝

•• ফিরে আসে ••

ক'দিন ধরে অবিনাশ বেশ ভয়ে ভয়ে আছে, রাতের বেলা নিজের একমাত্র মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে উদিগ্ন দৃষ্টিতে বসে থাকে। কারণ তার এই মধ্য কলকাতার ফ্ল্যাটে মাঝ রাতেই এক ভয়াবহ কান্ড ঘটে। এটা প্রথম প্রথম অতো গা করেনি ওহ। আসলে সারাদিনের এত চাপ ভেবেছিলো তার চোখের ভুল হয়তো...। এতদিন ধরে তিন্নিকে পাশের ঘরেই রাখতো সে। তবে দিন সাতেক আগে তিন্নির জ্বর হয়, সে প্রবল জ্বর। সন্ধেবেলার দিকে ডাক্তার দেখিয়ে জ্বরটা কমই ছিলো কিন্তু রাত বাড়তেই হুঁ হুঁ করে জ্বর বাড়লো.., তার সাথে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি! একা অবিনাশ পড়লো বিষম বিপদে। একা বলা হলো কারণ
তিন্নির মা তিন্নির জন্মের সময় মারা গিয়েছিলো। এদিকে তিন্নির মামার বাড়িতে এ বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তিন্নির দায়িত্ব তারা নেবেন না এটা জানাই ছিলো। অগত্যা অবিনাশ বহু কষ্টে এক মেয়ে নিযুক্ত করলো। কিন্তু সেই মেয়েটি সারাদিনের দায়িত্ব নিলেও রাতে নেবেনা, তাই সারাদিন অফিস করে এসে রাতে তিন্নির সমস্ত দায়িত্ব অবিনাশই পালন করতো। 

মা মরা মেয়েটাকে দেখলেই অবিনাশ এর মেহুলের কথা বড্ড মনে পড়ে। কত রাত মেহুলের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে এই দু বছরে তার হিসেব নেই।

     তো যা বলছিলাম সেদিন রাতে অসহায় অবিনাশ উত্তপ্ত মেয়েটাকে কোলে নিয়ে হুঁ হুঁ করে কাঁদছিলো। তিন্নি জ্বরের ঘোরে মা মা করছিলো..। অবিনাশ তিন্নিকে শুইয়ে জলপট্টির ব্যবস্থা করতে গিয়েছিলো। ফিরে দেখে আবছায়া আলোয় কে যেন একটা বিছানার পাশে বসে আছে! তিন্নির মাথায় হাত বোলাচ্ছে, অবিনাশ ঢুকতেই সরে গেলো। কাছে গিয়ে দেখে কে সযত্নে জলপট্টি দিয়ে গেছে। টেবিলে ওষুধ, অবিনাশ চমকে উঠলো। কিন্তু উপায় না থাকায় ওষুধ খাওয়ালো...।

    পরদিন জ্বর ছেড়ে গেলো। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে দেখে তিন্নির গায়ে খুব সুন্দর করে বোনা এক নতুন সোয়েটার। আয়াকে জিজ্ঞাসা করতে বললো, সে এসে থেকেই দেখছে তিন্নি এটা পরে আছে। সেদিন রাতেও তিন্নিকে কে যেন আদর করে গেলো। অবিনাশের চোখটা লেগেছিলো সবে, হটাৎ দেখে আবারও সেই কালো ছায়া...। গত দুরাত মেয়েকে কোলে নিয়ে জেগে আছে ভয়ে। কে জানে যদি কিছু হয়... 

   আজ রাতেও জেগেই ছিলো তিন্নি ঘুমাচ্ছিলো। অবিনাশ বাথরুম থেকে ফিরে তিন্নিকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে প্রায় পাগলের মতন এদিকে ওদিকে দেখতে লাগলো। হটাৎ সিঁড়ির ওদিক থেকে তিন্নির গলা শুনে সে ছুট দিলো। কিন্তু গিয়ে দেখে, তিন্নি সিঁড়ি থেকে পড়ে যাচ্ছে। সে ছুটে গিয়েও ধরতে পারলোনা,না...! চিৎকার করে উঠলো 

- তিন্নিইইইইইইইইই.....!

চোখ বুজে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। কতক্ষন পর নীচ থেকে তিন্নির আধো আধো বুলিতে বা বা... বা বা...শুনেই হুস ফিরলো। ছুট্টে গিয়ে দেখে ওই তো তিন্নি, কিন্তু ও -ও টা কার কোলে চড়ে আছে!

- কে এএএ তুমি...?

বলতেই তিন্নিকে সিঁড়িতে বসিয়ে কালো ছায়াটা সরে গেলো দুম করে। কানে কানে যেন বললো

- কাল থেকে রাতে তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ো অভি..!

অবিনাশের ঘাম দিয়ে জ্বর সারলো... 

- অভি.. অভি..। এ নামে তো মেহুল ডাকতো তবে কি..!

অবিনাশ তিন্নিকে কোলে নিলো পাশের ঘরে শুইয়ে দিয়ে আসতেই দেখে ওই কালো ছায়া মাথায় হাত বোলাচ্ছে তিন্নির! অবিনাশের চোখের কোনে জল, বিড়বিড় করে বললো 

                  ভালোবাসলে সবাই ফিরে আসে ...

কলমে - #অম্বিকা_পাল

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.