Header Ads

ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক ( সাইন বোর্ডে তাই লেখা ! ) এয়ারপোর্ট আছে।

ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক ( সাইন বোর্ডে তাই লেখা ! ) এয়ারপোর্ট আছে।  

কিন্তু এটাই দুনিয়ার একমাত্র আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট যার সাথে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কোনই যোগাযোগ নাই !  না আছে সিটি বাস সার্ভিসের কোন ব্যবস্থা , না আছে  কোন ট্রেন সার্ভিসের কোন ব্যবস্থা।  

কারণ, বাংলাদেশে যারা এয়ারপোর্ট ব্যবহার করে তাদের সবার সুইসব্যাংকে একাউন্ট আছে এবং সবাই প্রাইভেট গাড়িতে এয়ারপোর্টে যাওয়া আসা করে , সবাই ১২০০ টাকা দিয়ে একটি দেশি মুরগি কিনে খায় ! 

তাই কোন পাবলিক ট্রান্সপোর্টের দরকার পরে না ! 

অনেকেই বলবে কেন , ঢাকা বিমান বন্দর স্ট্যাশন তো আছে ! 

হ্যা তা আছে , ২০/২২ ঘন্টা জার্নি করে দুই তিনটা স্যুটকেস নিয়ে , অথবা বড় বড় দুইটা বস্তা নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ওগুলো মাথায় নিয়ে পোনে এক কিলোমিটার হাইটা , ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক পার হয়ে ওই স্ট্যাশনে  যদি জান নিয়ে, সব মাল নিয়ে  পৌঁছতে পারেন তাহলে বলা যায় আপনি একজন সুপার হিউম্যান ! 

 এই এয়ারপোর্টে নামার পর সব ধরণের বালা  মুসিবতের দোয়া পড়ার পর যদি ইমিগ্র্যাশন কাস্টমসের পুল সিরত কোন ঝামেলা ছাড়াই পার হতে পারেন তবে আপনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন।  

তবে কাস্টমস থেকে বের হয়ে যেখানে গাড়িতে উঠবেন ঠিক সেখানে নিজেকে আবিষ্কার করবেন যে আপনি আসলে খাঁচায় বন্দি ! 

এই খাঁচার ভিতর ১০/১২ গাড়ি ঢুকতে পারে মাত্র যাত্রী নেয়ার জন্য।  

স্বভাবতই , বিদেশ থেকে যারা আসে তাদের সাথে অনেক বোস্কাবাস্কি থাকে ফলে গাড়িতে উঠতে বেশ সময় লাগে।  
ফলে এই খাঁচার মধ্যে গাড়ি সহজে ঢুকতে পারে না যেহেতু গাড়ি রাখার জায়গা নাই।  

আপনাকে নিতে আসা ড্রাইভার খাঁচার বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে আধাঘন্টা, মাত্র ১০০ গজ দূরে আপনাকে নেয়ার জন্য।  

এইটা এমন একটি খাঁচা যে আপনি নিজে হেটে গেটের বাইরে গিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যেতে পারবেন না , কারণ ওয়ানওয়ে  সিস্টেম। 
 
যে গাড়ি একবার এই লাইনে ঢুকছে তাকে এই খাঁচা দিয়েই বের হয়ে যেতে হবে , এছাড়া কোন উপায় নাই।  

দীর্ঘ যাত্রা শেষে আপনি হয়তো টয়লেটে যাওয়ার চাপ অনুভব করছেন কিন্তু কোন উপায় নাই।  আপনাকে ব্যাকসাইডের মাসল শক্ত করে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।  
আর একবার যেহেতু বেরিয়ে এসেছেন তাই এয়ারপোর্টের ভিতরেও ঢুকতে পারবেন না কাজ সারার জন্য ! 

তাহলে এই খাঁচা কেন বানিয়েছে যেখানে মানুষের এতো ভোগান্তি হয় ! 

এখানেই আমাদের জাতীয় চরিত্রের প্রথম ছাপ দেখতে পাবেন ! 

আমরা জাতিগত ভাবে যে নিতান্তই নিম্ন শ্রেণীর তার প্রমান হলো এই খাঁচা।  

এই খাঁচা যদি না বানাতো তবে কোন বিদেশ ফেরত মানুষ তার মালসামানা নিয়ে তার বাড়িতে ফিরতে পারতো  না।  

চোর ডাকাত সন্ত্রাসী মাফিয়ার দল যাত্রীকে সেবার নাম করে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে  আপনার সব খসিয়ে এক কাপড়ে  জানে না মেরে ( যদি দয়া করে আর কি )  রাস্তায় নামিয়ে দিবে।

তাই এই খাঁচা ঢাকা এয়ারপোর্টে খুব জরুরী, নইলে কোন প্রবাসী দেশে ফিরে বাড়িতে পৌঁছতে পারবে  না ।  

যাইহোক , আপনি স্রেফ গরমে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে  এক সময় নিজের গাড়িতে উঠতে পারলেন , কিন্তু এক চুল আগাতে পারবেন না ! 

কারণ , আপনার গাড়ির সামনে আর এক ড্রাইভার রাস্তা ব্লক করে এক মিনিবাস ভর্তি আত্মীয় স্বজন নিয়ে তাদের সৌদি ফেরত জামাইকে রিসিভ করতে এসেছে।  

৭ সিটের মাইক্রো থেকে একে একে ২০জন বের হয়ে জামাইকে ফুল দিচ্ছে , গ্লাসে গরম দুধ খাওয়াচ্ছে , মিষ্টি মুখ করাচ্ছে ! 

আপনি তো আর এই সামাজিক কালচারে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন না , আপনাকে অধীর ধৈর্যসহকারে গাড়িতে বসে থাকতে হবে , আর কানের কাছে আনসারের বাঁশির তীব্র  আওয়াজ শুনতে হবে।  

যাক , এরপর কোন এক সময় খাঁচা থেকে বের হলেন ভাবলেন এবার বুঝি রেহাই ! 

কিন্তু না ভোগান্তি মাত্র শুরু হলো ! 

আন্তর্জাতিক একটি এয়ারপোর্ট কিন্তু এর থেকে বের হয়ে মেইন রোডে  উঠতে পারবেন না ! 

চোখের সামনে অনেকগুলো রাস্তা এবং গাড়িও আস্তে আস্তে চলছে , কিন্তু মেইন রোডে উঠতে পারবেন না।  

কারণ আগের সেই গোলচক্করে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ , এয়ারপোর্ট উন্নয়নের কাজ চলছে।  

তো এয়ারপোর্টে রাস্তার কাজ হতেই পারে , কিন্তু যাত্রী বাইরের যাবার রাস্তা নেই , আছে গোলক ধাঁধা ! 

সামনের  কয়েকটি গাড়ি যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে আমাদের ড্রাইভারও যাচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার জন্য , কারণ কে কোনদিকে যাচ্ছে কেউ জানে না।  

তো এক জায়গায় এক ছাতার নিচে দাঁড়ানো  নিরাপত্তা রক্ষীকে দেখে জিজ্ঞেস করলো , কার্গোর দিক দিয়ে কি বের হওয়া  যাবে ?! 

সে কোন কথা না বলে শুধু মাথা নাড়লো , বুঝলাম তার কোনই গরজ নাই আপনি বের হতে পারেন বা না পারেন।  

কার্গোর দিকে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা গেলো আর এক পুলিশ সব গাড়িকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে।  

অগত্যা আমাদের গাড়ি ঘুরে আবার সেই গোলক ধাঁধার ভিতর ফেরত আসলো।  

এবার ডমেস্টিক এয়ারপোর্টের দিকে অন্য গাড়িগুলি যাচ্ছে দেখে আমাদের গাড়িও যেতে লাগলো।  
কিন্তু লম্বা লাইন , গাড়ি বাম্পার টু বাম্পার , গাড়ি নড়ন চরণের কোন উপায় নাই।  

কিছু সময় এভাবে পার করার পর , আমাদের গাড়ির ড্রাইভার রোড-কোন দিয়ে রাস্তা বন্ধ করার ফাঁক গাড়ি ঢুকিয়ে অজানা উদ্যেশ্যে রওনা দিলো।  
মনে মনে ভাবছি নির্ঘাত ওখানে যেয়ে দেখবো রাস্তা টোটালি বন্ধ , ড্রাইভারকে আবার ঘুরে এখানেই আসতে হবে।  

যাইহোক , ড্রাইভার কয়েকটি খানাখন্দ পার হয়ে একটি রাস্তায় উঠলো, যেটাতে আরো অনেক গাড়ি আটকে আছে।  

এরপর সেই রাস্তা আমাদেরকে মেইন রোডে ( ঢাকা টঙ্গী রোড ) উঠতে দিলো।  কিন্তু উল্টা পাশে , মানে যাবো ঢাকার দিকে কিন্তু এই রাস্তা যাচ্ছে উত্তরার দিকে ! 

রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার , উপায় নেই ওপর পাশে যাওয়ার।  
মেট্রো রেলের কাজ হচ্ছে অনন্তকাল ধরে তাই একটি মাত্র লেইন যাচ্ছে উত্তরার দিকে। প্রচন্ড জ্যাম চারিদিকে  ! 

ধীরে ধীরে আমরা উত্তরার জসিমউদ্দিন মোর পর্যন্ত গেলাম আধা ঘন্টায় , সেখানে যেয়ে গাড়ি ইউটার্ন নেয়ার সুযোগ পেলো ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ! 

তখন বাজে সন্ধ্যা সাতটা , বুঝতেই পারেন কি প্রচন্ড জ্যাম লেগেছিল সেই রাস্তায়। 
 সেখানে থেকে আড়াই ঘন্টা পরে বাসায় পৌঁছতে পেরেছিলাম সেদিন।  

এই হচ্ছে ঢাকা " আন্তর্জাতিক " এয়ারপোর্ট নেমে  একজন যাত্রীর বাসায় পৌঁছার কাহিনী !  🙃



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.